টিকটক কেন এত জনপ্রিয়। টিকটক থেকে আয় করুন হাজার হাজার টাকা
টিকটক বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট। গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের আইওএস অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি হচ্ছে টিক টক। বিশ্বব্যাপী টিকটক চালু হওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায় ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব এর মত জনপ্রিয় সাইট গুলোকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। টিকটকের দেওয়া অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো জনপ্রিয় অ্যাপ গুলো। সুতরাং টিকটক কি কিভাবে এত জনপ্রিয় তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
টিকটক সহজ কথায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুধুমাত্র ভিডিও শেয়ার করার জন্য। একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর টিকটকের থেকে 15 সেকেন্ডের ভিডিও আপলোড করতে পারে ভিডিও সাবজেক্টের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। নিজের ট্যালেন্ট শো থেকে শুরু করে জনপ্রিয় কমেডি, মেলোডি অথবা সংগীতের সাথে নিজের লিপসিং করা ভিডিও শেয়ার করতে পারেন এবং টিকটিকি প্রথম কোন চাইনিজ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম সারা পৃথিবী জুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে । 2016 সালে চায়নার বেইজিংয়ে ভাইডানস নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন Zhang Yiming। বেক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন মাইক্রোসফটে চাইনিজ সফটওয়্যার ডেভলপার। এরপর তাঁর হাত ধরেই 2016 সালের সেপ্টেম্বরে চায়নায় চালু হয় Douyin.com চালু হওয়ার পরে Douyin.com চায়নায় রকেট গতিতে এর জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। এরপর তিনি এই জনপ্রিয়তাকে সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। খুব দ্রুততার সাথে তিনি Douyin.com এর আরো একটি ভার্শন প্রস্তুত করেন এবং সেটির নাম দেওয়া হয় টিকটক। টিকটক অ্যান্ড্রয়েড এবং আপল স্টোরএ মুক্ত হওয়ার প্রথম বছরি 130 মিলিয়ন এর উপরে ডাউনলোড হয়ে যায়। প্রথম বছরের ডাউনলোডের এই জনপ্রিয়তাকে পরের বছরের প্রথম তিন মাসে ছাড়িয়ে যায় এবং পরবর্তী ছয় মাসের মাথায় সে জনপ্রিয়তা গিয়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণেরও বেশি । টিকটকের এমন জনপ্রিয়তা দেখে ফেসবুক-ইউটিউব ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপস গুলো রীতিমতো চমকে যায়। 2017 সালের সব মিলিয়ে টিকটকের অ্যাপস ডাউনলোড ছিল 130 মিলিয়ন। 2018 সালে এসে টিকটক এর সেই ডাউনলোড এর পরিমাণ দাঁড়ায় 660 মিলিয়নে। অ্যাপস ডাউনলোড এর এমন বড় সংখ্যাটি তিনশত চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছে ফেসবুক এবং ইউটিউব এর জন্য। এরই মধ্যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিউজিকেলিকে কিনে নেয় প্রায় 1 বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে । মিউজিকেলি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ইউটিউব এর মতো প্লাটফর্ম হুবহু টিকটকের মতোই ছিল। বর্তমানে টিকটক ফেসবুক ইউটিউব এর সাথে পাল্লা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রথম সারিতে চলে এসেছে। কোম্পানিটির 10 হাজারেরও বেশি জব উন্মুক্ত রয়েছে সারা পৃথিবীর জন্য। টিকটকের অফিস রয়েছে প্যারিস ডুবাই লন্ডন নিউইয়র্ক মুম্বাই সিঙ্গাপুর জাকার্তাএবং চায়নার বেইজিংয়ে। টিক টক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দক্ষিণ এশিয়ায় । এরপরই রয়েছে সাউথইস্ট এশিয়া এন্ড রাশিয়া 2019 এ এসে টিক টক ড্রয়িং ডটকমের সাথে মাছ হয়ে যায় যাতে তাদের ডাউনলোড এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় এক বিলিয়নেরও বেশি এবং সারা পৃথিবীর 150 টি দেশের 75 ভাষায় বর্তমানে টিকটক এভেইলেবল রয়েছে। 2020 সালে এসে টিকটকের সিও পদে নিয়োগ পেয়েছেন কেবিন মায়ার যিনি এর আগে ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের ডিরেক্টর। প্রথমদিকে পৃথিবীর নামিদামি বড় সুপারস্টাররা টিকটক কে কোন পাত্তাই দেননি। সেসময় টিকটকের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার ছিলেন লরেন রে । লরেন রে এর একাউন্ট এই প্রথম কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট যেটি 40 মিলিয়ন ফলোয়ার পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে অনেক জনপ্রিয় হয়ে যান বিশ্বের নামিদামি শিল্পীরা। পরবর্তীতে টিকটকের জনপ্রিয়তায় সামিল হন জেনিফার লোপেজ উন্নত বিশ্বের নামিদামি স্টাররা। টিকটকের এ জনপ্রিয়তাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে আমেরিকান ন্যাশনাল ফুটবল লিগএন এফএল। টিকটকের সাথে এন এফ এল এর পার্টনারশিপ হয়েছে যাতে এন এফ এল এর যতসব ইনফ্লুয়েনশিয়াল কার্যকলাপ রয়েছে সেগুলো টিক টক তুলে ধরবে।
অর্থ আয়
টিকটকের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের ব্যবসা ও কয়েক শ গুণ বেড়ে গিয়েছে। শুধু গত বছরই Zhang Yiming টিকটকের হয়ে আয় করেছিলেন প্রায় 14 বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশাল আকারের ব্যক্তিগত আয়ের বাহিরেও ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ খুব দ্রুত আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । টিকটকের এমন জনপ্রিয়তাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে আমেরিকান ন্যাশনাল ফুটবল লীগ এন এফ এল। এতে অর্থনৈতিকভাবে খুব ভালোই লাভবান হবে টিক টক এবং সেই সব দিন খুব দূরে নয়।
টিকটকের জনপ্রিয়তা প্রতিটি পার্টনারশিপে টিকটক মাল্টি মিলিয়ন ডলার আয় করবে এটা নিশ্চিত। পার্টনারশিপের বাইরে টিকটকের আরেকটি ইনকাম হচ্ছে গিফট সেল টিকটকে ইমোজির মতো অসংখ্য ভার্চুয়াল গিফট সেল রয়েছে । যেসব গিফট সেল প্রদান করতে হলে এক ধরনের কয়েন এর মাধ্যমে সেগুলো কিনতে হয়। টিকটক থেকে কোন ইউজার যদি এসব গিফট কিনে তবে সে গিফটের দামের একটা অংশ টিকটক নিজে রেখে দেয় আর বাকি অংশটা গিফট যাকে প্রদান করা হয় তাকে দিয়ে দেওয়া হয়। এতে কনটেন্ট ক্রিয়েটরও আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে যায়। ক্রিয়েটর দের জন্য আরেকটি আয়ের উৎস হচ্ছে ভিডিও স্পনসর শিপ। ক্রিয়েটরা ইচ্ছে করলে তাদের ভিডিওতে পেইড স্পনসর সিপ ব্যবহার করতে পারে। এর জন্য টিকটক কে কোন ধরনের অর্থ প্রদান করতে হয় না তবে পেইড প্রমোশন পাওয়ার জন্য একজন ইউজারকে কমপক্ষে 1 লক্ষ থেকে 1 মিলিয়ন ফলোয়ার পৌঁছাতে হয়। তবে এটা নিশ্চিত যে টিক টক এ কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য আয়ের উৎস টা ফেসবুক ইউটিউব এর মত বিশাল আকারের নয় তবে যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুতই টিকটক বড় বড় প্ল্যাটফর্ম গুলোকে ধরে ফেলবে ।
রেফার করে আয়
আপনি চাইলে রেফার করে আয় করতে পারবেন।
রেফার করে আয় করাটা ইদানিং অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনার টিকটকের রেফার লিংক যদি আপনার বন্ধুদেরকে পাঠান সেই পাঠানোর লিংকে যদি আপনার বন্ধু ক্লিক করে এবং অ্যাপটি ডাউনলোড করে তখন আপনি 60-120 টাকা পাবেন। আপনি যদি তিনটি রেফার সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে আপনাকে 400 টাকা বোনাস দিবে। 6 টি রেফার সম্পন্ন করতে পারলে আপনাকে তারা 700 টাকা বোনাস দিবে।
ব্যবহারকারীর সংখ্যা
টিকটকের সবচেয়ে বেশি প্রায় 41 শতাংশ ব্যবহারকারী হচ্ছে 16 থেকে 24 বছর বয়সী তরুণ-তরুণী ।তাই কোন সন্দেহ ছাড়া বলা যায় টিকটক তরুণদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এর মধ্যে 46 শতাংশ নারী এবং 54 শতাংশ পুরুষ। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন টিক টক এ ভিডিও ভিউ এর সংখ্যা এক বিলিয়নেরও বেশি। বিশাল এই ভিডিও থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী হচ্ছে ইন্ডিয়া থেকে প্রায় 465 মিলিয়ন ব্যবহারকারী ইন্ডিয়া থেকে রয়েছে এরপর রয়েছে চায়না। টিক টক এর ডাউনলোড 1.5 বিলিয়ন হলেও একটি বিশাল সংখ্যা 800 মিলিয়ন এর একটু বেশি ব্যক্তিগত ভাবে বোঝার জন্য আমি টিক টক ডাউনলোড করেছি এবং দেখেছি যে তাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সত্যি অসাধারণ কাজ করে । সুতরাং নিশ্চিত ভাবে বলা যায় টিক টক এমন কিছু করেছে যে সত্যিকার অর্থে অডিয়েন্স চায়।
ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন পরবর্তীতে অন্য কোন টপিক নিয়ে হাজির হব।