ছোট বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
ছোট বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে– আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক বৃন্দ, কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আপনি কি ছোট বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমি শেয়ার করব ছোট বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে তা নিয়ে। আশা করি সবাই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
দেশের ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের জন্য জন্ম নিবন্ধন একটি অপরিহার্য দলিল। জন্ম নিবন্ধন বা জন্ম সনদ জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ দলিল বা প্রমাণ। তাই আপনার সন্তানের জন্মের পরপরই অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি অভিভাবকদের উচিত সন্তানের নাম সরকারি রেজিস্টারে নথিভুক্ত করা।
আরও পড়ুনঃ
আজকের পোস্টে আমি তুলে ধরেছি সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে। তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
জন্ম নিবন্ধন কি?
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক জন্ম নিবন্ধন কি? জন্ম নিবন্ধন হল শিশুর জন্মের পর শিশুর যাবতীয় তথ্য সরকারি রেজিস্টারে এন্ট্রি করা। জন্ম নিবন্ধন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে একজন নবজাতক শিশুর জাতীয়তা নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ। আর জন্ম নিবন্ধনের ফলে রাষ্ট্র সেই ব্যক্তিকে এদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আরও দেখুনঃ
- জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
- জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম
- জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম ২০২২। Birth certificate অনলিনে
- জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম ২০২২
একটি সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে কি লাগে?
সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য পূরণকৃত আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি, পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি, জন্ম তারিখের প্রমাণ, পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন এবং পিতামাতার জাতীয় পরিচয়।
0-45 দিন বয়স থেকে শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে কি লাগে?
- অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণের প্রিন্ট কপি।
- সন্তানের পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
- স্থান এবং জন্ম তারিখ বা ছাড়পত্রের প্রমাণ হিসাবে হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত জন্ম শংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন প্রিন্ট কপি
- পিতামাতার ইউপি ট্যাক্স পেমেন্টের ফটোকপি।
- পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
45 দিন – 5 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে কী লাগে?
1. অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণের প্রিন্ট কপি।
2. সন্তানের পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
3. পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
4. পিতামাতার ইউপি ট্যাক্স পেমেন্টের ফটোকপি।
5. পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন শংসাপত্রের অনলাইন প্রিন্ট কপি।
6. ইপিআই কার্ডের ফটোকপি।
- টেক ও প্রযুক্তি বিষয়ে আরও জানতে ভিজিট করুন
5 বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য কী প্রয়োজন?
1. অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণের প্রিন্ট কপি।
2. সন্তানের পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
3. ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত শংসাপত্রের ফটোকপি বা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির স্কুল সার্টিফিকেট বা এসএসসি/এইচএসসি।
4. পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
5. পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন, শংসাপত্র।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি
1. 45 দিনের বেশি বয়সী শিশুদের জন্ম নিবন্ধন বিনামূল্যে।
2. 45 দিন পর অর্থাৎ 46 দিন থেকে 5 বছর জন্ম নিবন্ধন ফি 25 টাকা। দেশের বাইরে থেকে জন্ম নিবন্ধনের ফি USD 1।
3. বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায় আসল সার্টিফিকেট পেতে বা তথ্য সংশোধনের পর সার্টিফিকেটের কপি পেতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা যাবে।
4. কিন্তু বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায় জন্ম নিবন্ধন সনদের একটি অনুলিপি পেতে, দেশের বাইরের প্রার্থীদের জন্য 50 টাকা এবং 1 মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে।
5. জন্ম সনদ সংশোধন ফি 100 টাকা। বিদেশী প্রার্থীদের জন্য 2 USD।
নতুন জন্ম নিবন্ধন 2022-এর জন্য আবেদন
কীভাবে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন তার বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ – বর্তমানে, হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করে আবেদন করা আর সম্ভব নয়। আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করতে হবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন 2004 অনুযায়ী, সন্তানের জন্মের 45 দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে যা করতে হবে
1. সন্তানের জন্মের স্থান নির্ধারণ।
2. সন্তানের পিতামাতার সকল তথ্য।
3. সন্তানের স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা।
4. যে আবেদনটি করবে তার তথ্য।
অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন ফর্ম সফলভাবে পূরণ এবং জমা দেওয়ার পরে, আপনি ফর্মটি প্রিন্ট করার অফশন পাবেন। এখন আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করুন এবং উপরের সকল কাগজ পত্র সহ আপনার সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে জমা দিন।
সব ধরনের কাগজ পত্র জমা দেওয়ার পর, আপনার জন্ম নিবন্ধন শংসাপত্র নির্ধারিত অফিস দ্বারা যাচাইকরণের পর 5 কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করা হবে।
জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের শর্তাবলী
জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করা হলো: পিতা বা মাতার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে, তাদের নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে তথ্য সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করে তাদের নাম সংশোধন করতে হবে। তারপর প্রার্থীর জন্ম নিবন্ধনে পিতামাতার নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করা যাবে।
পিতামাতার জন্ম সনদ না থাকলে এবং প্রার্থীর জন্ম তারিখ 2001 সালের আগে হলে, তার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করার সময় পিতামাতার নাম নির্ধারণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের একজন মারা গেলেও মৃত্যুর কোনো প্রমাণ দেখাতে হবে না। সেই সঙ্গে আলাদাভাবে তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের কোনো বিষয় নেই।
তবে প্রার্থী যদি 2001 সালের পরে জন্মগ্রহণ করেন তবে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনের সময় পিতা বা মায়ের নাম সংশোধন করার জন্য তাদের মৃত্যু প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
1. প্রশ্ন: শিশুদের জন্ম নিবন্ধন কখন করতে হয়?
উত্তর: একটি শিশুর জন্ম তারিখ থেকে 45 দিনের মধ্যে বা 45 দিন থেকে 5 বছরের মধ্যে একটি নতুন জন্ম নিবন্ধন করা ভাল।
2. প্রশ্ন: নতুন জন্ম নিবন্ধন কোথায় করতে হবে?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
3. প্রশ্ন: নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে কি কি লাগে?
উত্তরঃ নবজাতক বা শিশুর বয়স অনুযায়ী কাগজ পত্রের প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তিত হয়। আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়েন তবে আপনি বুঝতে পারবেন কী কী কাগজপত্রের প্রয়োজন। সাধারনত 0-45 দিন/ 45 দিন-5 বছর/ 5 বছর উপরে কাগজপত্রের প্রয়োজনীয়তা কিছুটা আলাদা।
4. প্রশ্নঃ কত দিন পর জন্ম নিবন্ধন পাওয়া যায়?
উত্তরঃ নির্ধারিত অফিস দ্বারা যাচাইকরণের পর আপনার জমা দেওয়া কাগজ জমা দেওয়ার 5 কার্যদিবসের মধ্যে আপনার জন্ম নিবন্ধন প্রদান করা হবে।
5. প্রশ্ন: নতুন জন্ম নিবন্ধন কিভাবে করতে হবে?
উত্তরঃ একটি নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে আপনাকে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তারপর আপনাকে উল্লিখিত ফর্মটি প্রিন্ট করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে আবেদন জমা দিতে হবে।
শেষ কথা
আজকের পোস্টে একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি এতে আপনারা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। সম্পুর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
2 Comments