২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করি সবাই ভালো আছেন। আপনি কি ২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আজকের পোস্টে আমরা শেয়ার করব ২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা। আশা করি সবাই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ত্রিশ লক্ষ শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই স্বাধীনতা। আর এই সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর জন্য আমরা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে ২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃত্তি করে থাকি। তাদের জন্যই আজকের এই পোস্ট।

২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

কবিতাঃ স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা  (সালমান আহমদ)

স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা!

তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।

লাখো জনতার হৃদয়বিদারক

স্মৃতিকথা তুমি স্বাধীনতা।

যেদিন বাংলা বলাতে ছিল যত বাধা

সেদিন স্বাধীনতা।

সেই কালো রাতের অস্থির অবস্থা

সেই তুমি স্বাধীনতা।

২৫ শে মার্চের করুন স্মৃতিকথা

সেই তুমি স্বাধীনতা।

২৬ শে মার্চের ডাক দেয়া জনতা

সেই তুমি স্বাধীনতা।

শত মা বোনের মানহানির যত কথা

সেই তুমি স্বাধীনতা ।

দামাল ছেলের প্রাণের অস্থিরতা

সেই তুমি স্বাধীনতা

বাঙালির থাবায় শত্রুদের পরাধীনতা

সেই তুমি স্বাধীনতা

এক ঝাক তরুনের জেগে ওঠার কথা

সেই তুমি স্বাধীনতা।

২৬ শে মার্চের ইতিকথা

সেই তুমি স্বাধীনতা।

স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা

তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।

কবিতাঃ তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা — (শামসুর রাহমান)

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,

তোমাকে পাওয়ার জন্যে

আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল,

সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো

দানবের মত চিৎকার করতে করতে

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস রাইফেল

আর মেশিনগান খই ফোটাল যত্রতত্র।

তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।

তুমি আসবে বলে বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার

ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর।

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,

অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতা-মাতার লাশের উপর।

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে

আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো

উদাস দাওয়ায় বসে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের

দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

মোল্লাবাডির এক বিধবা দাঁডিয়ে আছে

নড়বড়ে খুঁটি ধরে দগ্ধ ঘরের।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে

বসে আছে পথের ধারে।

তোমার জন্যে,

সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,

কেষ্ট দাস, জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,

মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,

গাজী গাজী বলে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে,

রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস

এখন পোকার দখলে

আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুরে-বেড়ানো

সেই তেজি তরুণ যার পদভারে

একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে–

সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত

ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,

নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক

এই বাংলায়

তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।

কবিতাঃ উচ্চারণগুলি শোকের — (আবুল হাসান)

লক্ষি বউটিকে

আমি আজ আর কোথাও দেখিনা,

হাটি হাটি শিশুটিকে

কোথাও দেখিনা,

কতগুলি রাজহাঁস দেখি

নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি,

কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখিনা

শিশুটিকে কোথাও দেখিনা!

তবে কি বউটি রাজহাঁস?

তবে কি শিশুটি আজ

সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ?

অনেক রক্ত যুদ্ধ গেলো,

অনেক রক্ত গেলো,

শিমুল তুলোর মতো

সোনারূপো ছড়ালো বাতাস।

ছোটো ভাইটিকে আমি

কোথাও দেখিনা,

নরোম নোলক পরা বোনটিকে

আজ আর কোথাও দেখিনা!

কেবল পতাকা দেখি,

কেল উৎসব দেখি,

স্বাধীনতা দেখি,

তবে কি আমার ভাই আজ

ঐ স্বাধীন পাতাকা?

তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?

কবিতাঃ কনসেনট্রেশন ক্যাম্প — (রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ)

তাঁর চোখ বাঁধা হলো।

বুটের প্রথম লাথি রক্তাক্ত করলো তার মুখ।

থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা-রক্তে একাকার হলো,

জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত ঝওে পড়লো কংক্রিটে।

মা…মাগো…চেঁচিয়ে উঠলো সে।

পাঁচশো পঞ্চান্নো মার্কা আধ খাওয়া একটা সিগারেট

প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক।

পোড়া মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে।

জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ

আমারা কথা বলবো।

লাঠিচার্জ আমাদের ফেরাতে পারেনি

কাঁদানে গ্যাস আমাদের ফেরাতে পারেনি

র্ইাফেল আমাদের ফেরাতে পারেনি

মেশিন গান আমাদের ফেরাতে পারেনি –

আমারা এসেছি,

আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো।

কৃষক তোমাদের পক্ষে যাবে না

শ্রমিক তোমাদের পক্ষে যাবে না

ছাত্র তোমাদের পক্ষে যাবে না

সুন্দর তোমাদের পক্ষে যাবে না

স্বপ্ন তোমাদের পক্ষে যাবে না

তারা সকলেই কষ্টে আছে

তারা সকলেই অনটনে আছে

তারা সকলেই বিক্ষোভের হাত তুলেছে।

তোমাদের পক্ষে যাবে কুকুর

তোমাদের পক্ষে যাবে সুবিধাভোগী

তোমাদের পক্ষে যাবে বিত্তবান নেকড়েরা।

বৃক্ষ তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে

শস্য তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে

রক্ত তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে

তোমাদের অভিশাপ দিচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত শিশুরা।

লক্ষ মৃত্যু আমাদের ফেরাতে পারেনি

আমারা এসেছি।

আমারা আমাদের শিক্ষাহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের চিকিৎসাহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের গৃহহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের বস্ত্রহীনতার কথা বলবো

আমারা আমাদের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কথা বলবো।

আমরা তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা থেকে এসেছি

আমরা সিপাহী আন্দোলনের দুর্গ থেকে এসেছি

আমরা তেভাগার কৃষক, নাচোলের যোদ্ধা

আমরা চটকলের শ্রমিক, আমরা সূর্যসেনের ভাই

আমরা একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে এসেছি

কাঁধে স্টেন, কোমরে কার্তুজ, হাতে উন্মত্ত গ্রেনেড-

আমরা এসেছি।

✅ কবিতাঃ একটি পতাকা পেলে — (হেলাল হাফিজ)

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে,

আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে,

ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস

ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন পেয়েছি, পেয়েছি।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে

ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,

বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,

সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ

সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

 

কবিতাঃ আমার দেশ স্বাধীনতা — (মিলি কবিরাজ)

মানুষের অনুভূতি যত গুলো

সুন্দর অনুভূতি ভালোবাসা।

যা কিছু করণীয় পৃথিবীতে

মাতৃভূমির জন্য মধুর সবচেয়ে

এই ভালোবাসা হয়নি যাদের অনুভব।

নেইতো কিছু তারমধ্যে দুর্ভোগ।

হয়েছিল একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

মাতৃভূমিকে বাঁচাবার জন্য

জানবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

স্বাধীন বাংলার ইতিহাস

গর্বে ফুলবে বুক বীরত্বআত্মত্যাগ।

জাগবে ভালোবাসা দেশের জন্য,

সোনালী ঊষালগ্নে নব কিশলয় নন্দিত।

হিমসকালে তুষার স্নিগ্ধা কুমারী,

কুড়ায় আঁচলে স্বাধীনতা অঞ্জলী ভরি।

গণ-হ-ত্যা ২৫ শে মার্চের রাতে,

স্বাধীনতা ২৬ শে মার্চের প্রভাতে।

গণযুদ্ধ নেই কোন মানবতা,

গ্লানি নিঃশংস নিষ্ঠুরতা।

ঝরে পরলো তাজা প্রাণ লক্ষ লক্ষ,

রঞ্জিত হল বিদেশি অস্ত্র।

বাঙালি বক্ষ রক্ত,

লক্ষ শহীদ প্রাণ দিয়ে

দেখেছেন ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।

প্রিয় মাতৃভূমিতে মুক্তিযোদ্ধার হাতে,

হাত রেখে নতুন প্রজন্ম।

বলবে এনেছ স্বাধীনতা প্রিয় ভাই বন্ধু,

তাইতো এনেছি অনেক ভালোবাসা,

শুধুই তোমাদের জন্য।

বলবে মধুর স্বরে,

যে স্বপ্ন তোমরা দেখেছিলে।

গড়ে তুলবো সেই সোনালি বাংলাদেশ,

আঁকবো সবুজের রংগে লাল পতাকা,

সবুজ-শ্যামল ধানক্ষেত।

গড়ে তুলবো সেই বাংলাদেশ,

গরবো সেই সোনালী বাংলা,

শোধ করবো তোমাদের রক্তের ঋণ।

শেষ কথাঃ 

আজকের পোস্টে ২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি ২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এরকম আরও পোস্ট পেতে নীটবাজনীটবাজ এর সাথেই থাকুন।  ধন্যবাদ সবাইকে।

Rate this post

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *