১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কবিতা | বিজয় দিবসের কবিতা

আপনি কি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কবিতা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কবিতা – আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকবৃন্দ, কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আপনি কি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কবিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমি শেয়ার করব ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কবিতা নিয়ে। আশা করি সবাই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

১৬ ডিসেম্বর আমাদের জন্য গৌরবের একটি দিন। এইদিনে আমাদের দেশ বিজয় অর্জন করে। এইজন্যই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদির আয়োজন করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ

আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আমি বাছাই করা কিছু কবিতা শেয়ার করব। তো চলুন শুরু যাক।

বিজয় দিবসের কবিতা | ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কবিতা 

বিজয় দিবস আমাদের জন্য একটি গৌরবের দিন। এইদিনে আমাদের বিজয় অর্জন হয়েছে। এইদিন কে উদ্দেশ্য করে অনেকেই কবিতা আবৃত্তি করে থাকে। আপনাদের সুবিধার জন্য আমি বাছাই করা কিছু কবিতা শেয়ার করব। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক।

কবিতাঃ রিপোর্ট ১৯৭১

আসাদ চৌধুরী

প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত,চঞ্চল

বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ,মনোরম

আমাদের নারীদের কথা বলি,শোনো।

এ-সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে

বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়-

বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে

তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে

শুধু মুখ টিপে হাসে।

প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে

কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম,পেয়ারা,চালিতা-

সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী।

অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার

সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা

সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে-

আমি তার সুরকার-তার রক্তে স্বরলিপি লিখি।

মরিয়ম,যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী

গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়

মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে-ঝিয়ে

খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো,

অস্ফুট গোলাপ-কলি লহুতে রঞ্জিত ক’লে

কার কী বা আসে যায়।

বিপন্ন বিস্ময়ে কোরানের বাঁকা-বাঁকা পবিত্র হরফ

বোবা হ’য়ে চেয়ে দ্যাখে লম্পটের ক্ষুধা,

মায়ের স্নেহার্ত দেহ ঢেকে রাখে পশুদের পাপ।

পোষা বেড়ালের বাচ্চা চেয়ে-চেয়ে নিবিড় আদর

সারারাত কেঁদেছিলো তাহাদের লাশের ওপর।

কবিতাঃ আমি স্বাধীনতা বলছি

মোঃ আখতার হোসেন মশুল (ঢাকা)

আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি

আমাকে ছাড়া তুমি পরিচয়হীন

সত্তাবিহীন। দেশমাতা শৃংখলিত,

তুমি শংকিত বিহঙ্গ, পিঞ্জরে আবদ্ধ ।

আমার জন্য রয়েছো রক্ত গঙ্গা,

ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছো জয়গান,

সয়েছো জুলুম, বুলেট, বেয়োনেট

আরও কত মারণাস্ত্র।

রাজপথ, মাঠ-ঘাট প্রান্তর

করেছো রক্তে প্লাবিত,

কত নারী হারিয়েছে সম্ভ্রম

পুড়ে ছারখার স্থাপনা গঞ্জ গ্রাম ।

তোমরা দুর্জয়, বিশ্বের বিস্ময়

যুদ্ধ জয়ে এনেছো আমায়

তোমাদের স্বকীয় সত্তা, প্রিয় স্বাধীনতা।”

কবিতাঃ ” একটি পতাকা পেলে

হেলাল হাফিজ

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমি আর লিখবো না

বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস

ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,‘পেয়েছি,পেয়েছি’।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে

ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,

বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,

সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ

সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে। “

কবিতাঃ বিজয়ের কবিতা

-মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

একটি প্রাণের দেশ আমার

এক টুকরো হিরে

স্বর্গ ফিরে পাই রে ও মা

যখন ফিরি নীড়ে।

তোর হাসিটা রাখতে ধরে

দিলেন যারা প্রাণ

মনে প্রানে গাইব সদা

তাদের জয়গান।”

কবিতাঃ ১৬ ই ডিসেম্বর

-অন্তু সরকার প্রণব

১৬ই ডিসেম্বর এলে

মনটা আমার কেমন কেমন করে

সোনার ছেলেরা যে যুদ্ধে গিয়ে

আর ফেরেনি ঘরে।

পাক হানাদারদের ওই হাতে

মরলো মানুষ দিনে রাতে

দেশের জন্য জীবন দিয়ে

শহীদ হলো তারা তাতে।

নয় মাস যুদ্ধ করে

সব হানাদার হলো শেষ

সৃষ্টি হলো এক নতুন দেশের

দেশের নামটি বাংলাদেশ।

এই বিজয়ের মাঝেও যে

অনেক কষ্ট আছে

জীবন দিয়ে লাখো মানুষ

শহীদ হয়ে গেছে।

৫২ বছর পরে এসে

ষোলই ডিসেম্বরে

দেশকে মোরা কী দিয়েছি

দেখি হিসাব করে।

দেশের মানুষ থাকুক ভালো

মিলিয়ে কান্না হাসি

আসো সবাই একটু হলেও

দেশকে ভালোবাসি।”

কবিতাঃ এই পতাকা

-সংগৃহীত

 এই পতাকা আমার

 এই পতাকা তোমার

 এই পতাকার মান বাঁচাতে

 ভয় করিনি বোমার।

  এই পতাকা বাবার

 এই পতাকা সবার

 এই পতাকা দেয় প্রেরণা

 মুক্ত হতে যাবার।”

কবিতাঃ বিজয়ের দিন

-তাসনিয়া আহমেদ

বাংলাদেশে পাক-শাসনের আসন যেদিন টলে,

সেদিনটাকে আজকে সবাই ‘বিজয় দিবস’ বলে।

বিজয় কিন্তু অনেক দামী; সহজলভ্য নয়।

মুক্তিসেনা বিজয় আনে জয় করে সব ভয়।

লাল সবুজের পতাকাটার আজকে খুঁটি শক্ত

আনতে সেটা,বীর সেনারা দিয়েছিলো রক্ত।

বাংলা মায়ের বীর ছেলেরা ভয় পায়না মোটে।

তাদের ত্যাগে মোদের মুখে বিজয় স্লোগান ফোটে।

বিজয় দিবস রক্তে ধোয়া,বীর শহীদের স্মৃতি।

বিজয় নিয়েই আজকে লেখা-কবিতা আর গীতি।

বিজয় মাখা ফুলে-পাতায়,বিজয় সবুজ ঘাসে।

বছর ঘুরে এদিন যেন বারে বারে আসে!”

কবিতাঃ আহ্বান

-মাহমুদ লতিফ

এসো খোকা এসো খুকু

ঘুমিয়ে থেকো না আর

তাকিয়ে দেখ সম্মুখে তোমার

মুক্ত আলোর দুয়ার।

চলো খোকারা চলো খুকুরা

হও প্রাণ উচ্ছল

জাতি হিসেবে স্বাধীন তোমরা

রেখো দৃঢ় মনোবল।

তোমাদের পিতা তোমাদের মাতা

ছিলো এ দেশেরই সন্তান

স্বাধীন করতে এ দেশ তারা

করেছেন জান কোরবান।

তাদেরই আশিস পেয়েছো তোমরা

গড়ে তুলবে এ দেশ

সাজিয়ে দিও বাংলাদেশেরে

প্রাণ করে নিঃশেষ।

কবিতাঃ বিজয়

-খাইরুল আলম রাজু

 বিজয় মাসে ভোরের রবি, ছড়ায় আলো হাসিতে

 যেমনি করে সুরের মায়া রাখাল ছড়ায় বাঁশিতে!

 বিজয় ছবি আঁকতে থাকি পরীর ডানা, পাখিতে;

 বন-বনানী গাছ-গাছালি অবুঝ শিশুর আঁখিতে।

  বিজয় হাসি নাচতে থাকে পল্লী-বালার চুলেতে

 সবুজ ঘাসে, ধানের শীষে, শিশির ভেজা ফুলেতে।

 বিজয় সুরে উড়তে থাকি বিজয় খুশির ঘুড়িতে

 উড়ে উড়ে যাই হারিয়ে নাম না জানা পুরীতে।

  বিজয় বাজে প্রাণের মাঝে তাক ধিনা-ধিন সুরেতে

 আপন মায়ায় আপন সুরে আকাশ নীলের দূরেতে।

 বিজয় আমার মুক্ত স্বাধীন বাউল-কবির ভাষাতে

 বিজয় আলো যাক ছড়িয়ে দেশটা গড়ার আশাতে।

কবিতাঃ একটি পতাকা

-তৌহিদুর রহমান

এইতো দেখো জানলা দিয়ে যাচ্ছে দেখা ঐ।

লাল সবুজের একটি কাপড় উড়ছে অজান্তেই।

ঝড় লেগেছে,রোদ পড়েছে কাপড় টুকু বেয়ে।

তবুও দেখো দুলছে কাপড় হাসছে কেমন চেয়ে।

চারদিকে তার ভীষণ সবুজ, যেমন সবুজ ঘাস।

মাঝখানেতে দুঃখ নিয়ে রক্তে রঙিন লাশ।

আর আছে তার স্নিগ্ধ ছায়া ক্লান্ত রোদের পর।

স্বাধীন হয়ে বাচতে শেখার চড়ম অহংকার।

জানলা দিয়ে তাকিয়ে তুমি দেখো আরেকবার।

ঐ তো কেমন উড়ছে স্বাধীন পতাকা আমার।”

কবিতাঃ ” বিজয় ফুল

-সাকিব জামাল

আয় বন্ধু খুশি মনে

ইশকুলেতে যাই

ইশকুলেতে গিয়ে মোরা

‘বিজয় ফুল’ বানাই।

বিজয় ফুলের মানে

এসো, তুমি আমি জানি

ছয় পাঁপড়ি ছয় দফা

মাঝে উজ্জ্বল ৭ মার্চ খানি।

বিজয় ফুল পড়ি বুকে

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা

গড়ে তোলার বাসনায়।”

কবিতাঃ ” বিজয় নিকেতন

-অতনু সাগর

আবার এলো ফিরে

ধানসিঁড়িটির তীরে

বাংলার বিজয় ক্ষণ

এসো মাতি আনন্দে

নাচি গাই ছন্দে ছন্দে

ভেসে যাই বিমুগ্ধ সমীরণ।

ভুলিনি কখনো মোরা

দেশসেরা সন্তান,

যারা বিলিয়েছিল প্রান ও মন

উড়েছিল বাংলার পটে

সাগরসম রক্তের তটে

স্বাধীন বাংলার বিজয় নিকেতন।”

কবিতাঃ “খোকা

-রানাকুমার সিংহ

 একাত্তরে যুদ্ধ যখন শুরু

 ঠা-ঠাঠা-ঠা গুলির আওয়াজ

 চারদিকে যেন পড়ছিল বাজ

 খোকার বুকে গেঁথেছিলো

 কাঁপন দুরুদুরু!

  সেই কথাটি পড়লে মনে

 শিউরে গা আজ এই ক্ষণে!

 কেমন করে ভুলতে পারে

 সেই কথাটি বলো

 খোকার চোখের কথা বোঝে

 আকাশ নদী জলও।

  একাত্তরের সেই এক রাতে

 শেষ দেখা হয় বাবার সাথে

 খোকার তখন বয়স সবে সাত

 তখন থেকেই বাবার পরশ

 খুঁজতো খোকার কোমল দুটি হাত।

  বাবা গেলো যুদ্ধে চলে

 ফিরে আসার কথা বলে

 খোকার দুচোখ ভরেছিলো

 সাগর সমান জলে।

  নয়টি মাসের লড়াই শেষে

 আসলো বিজয় হেসে হেসে

 ষোলই ডিসেম্বরে

 কিন্তু খোকার বাবা কভু

 আসলো না আর ফিরে।

  তখন থেকেই খোকার চোখে

 বাস্তবতায় স্বপ্নলোকে

 স্বাধীনতা বিজয় যে তার

 বাবার স্মৃতি ঘিরে। “

কবিতাঃ ১৬ ই ডিসেম্বর

-শাহ্ আলম শেখ শান্ত

বিজয় হয়েছে আজ লাল ও সবুজের

জান দিতে হয়েছে লক্ষ বুঝ অবুঝের

হয়েছে স্বাধীন আজ এই সোনার বাংলাদেশ

সুজলা-সুফলা সোনালী ক্ষেতের সমাবেশ ।

প্লাবিত হয়েছে এদেশ আজ বিজয় উল্লাসে

প্রিয়জন হারা অসহ্য শোক ভুলে গেছে হেসে

বুঝেছে দারুণ অত্যাচারী এজাতি নয় ক্ষীণ

অন্যায় রুখতে সজ্জিত থাকে নিশিদিন ।

নতশিরে করে না আপোশ অত্যাচারির ঠেস

রক্ত দিয়ে যতনে গড়েছি সোনার বাংলাদেশ

জলন্ত প্রমাণ তার ১৬ ই ডিসেম্বর

ক্ষমার মঞ্চেও হানাদার কেঁপেছিল থত্থর !

অন্যায়ের গলা টিপে ধরি ভয়কে করি জয়

অক্ষয় ইতিহাস ধরার বুকে বাঙালির পরিচয়

এদিনেই লিখেছি ধরার বুকে রক্ত দিয়ে বিজয় গাঁথা

চিনে গেছে বিশ্বজাতি বাঙালিদের উঁচুমাথা ।”

কবিতাঃ বিজয় দিবসের কবিতা

-তানভীর মাহাতাব

মানচিত্রটার জন্ম যেদিন

সেদিনটা তো দেখিনি

ইতিহাস আমায় জানিয়েছে

অনুপ্রেরণার কাহিনী।

কতশত আত্মত্যাগ

আছে আজও আর্তনাদ

বিষ্ময় নিয়ে শুনি সেসব

ছাড়িয়ে গর্বের বাঁধ।

আসছে বাধা চলার পথে

অর্জনে এগিয়ে বেশ

তরুণ প্রজন্মদের নিয়ে

স্বপ্ন বুনে বাংলাদেশ।”

কবিতাঃ পাগলী মা’টা

-জনি হোসেন

ফিরে এল বিজয় দিবস

নেইতো খোকা ঘরে,

সেই যে গেল আর এলোনা

যুদ্ধে একাত্তরে।

স্বপ্ন বোনে পাগলী মা’টা

ফিরবে খোকা কবে,

ফুলেল মালা গলে দিবে

ফুল ঝরে যায় টবে।

ছেলে আসবে,আসবে ছেলে

পাগলী মা’টা চ্যাঁচায়,

পাগলী মা’টা রুক্ষ সুক্ষ

যত্ন নিতে কে চায়?

প্রতিবারে বছর শেষে

বিজয় যখন আসে,

ছেলে হারা পাগলী মা’টা

দাঁত খিলিয়ে হাসে।”

শেষ কথা 

আজকের পোস্টে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কবিতা শেয়ার করা হয়েছে। আপনারা যারা বিজয় দিবসের কবিতা খুজতেছিলেন তাদের অনেক উপকারে এসেছে।

আশা করি আপনাদের সবার কাছে ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে।

Rate this post

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *